Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিকথার ৭৫ বছর এবং প্রাণিসম্পদ তথ্য সেবা

এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, ‘কৃষিকথা’  হাঁটিহাঁটি পাপা করে ৭৫ বছরে পদার্পণ করছে। একটি পত্রিকার মাধ্যমে জাতিকে ৭৫ বছর তথ্য সেবা দেয়া চাট্টেখানি কথা নয়। ৭৫ বছর নানাভাবে যারা এ পত্রিকার সঙ্গে কাজ করেছেন আজকের এ সংখ্যাটি তাদের সবার জন্যই অত্যন্ত স্মৃতিময় এবং আনন্দের। ভাবতে অবাক লাগে আমিও এ পত্রিকার সঙ্গে সমানতালে পথ চলেছি ২৩ বছর।  আমার ২৩ বছরের চাকরি জীবনের সাত বছর আমি সরাসরি প্রাণিসম্পদ তথ্য সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছি। বলা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ শাখাটিকে চালিয়েছি আমরা দুজন মাত্র মানুষ, একজন কৃষিবিদ ডা. সুলতান মহিউদ্দিন এবং অন্যজন আমি। প্রাণিসম্পদ তথ্য সম্পর্কিত কাজে তখন কৃষি তথ্য সার্ভিসের সাথে আমাদের আন্তঃযোগাযোগটি অত্যন্ত নিবিড় ছিল। বাংলাদেশ বেতারের ‘দেশ আমার মাটি আমার’ এবং ‘সোনালী ফসল’ এবং বিটিভির বহুল প্রচারিত কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ’ এর পরিকল্পনা ও অনুষ্ঠান পরিচালনার নানা কাজে আমাকে ১৯৯২ সনের মে মাস থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম শাখা  ‘কৃষি তথ্য সার্ভিসে’  যাতায়াত করতে হতো। এ যাতায়াতের মাধ্যমেই কৃষিকথার সঙ্গে আমার পরিচয়। পত্রিকাটি  সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নের নানা রকম তথ্য অত্যন্ত সহজ ভাষায় পাঠযোগ্য করে প্রকাশ করে। সেই অর্থে কৃষিকথা  একটি সামগ্রিক কৃষির নানাবিধ তথ্যের  বহুল প্রচারিত একটি মুখপত্র। কৃষিবিষয়ক নানা প্রযুক্তি, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগিবিষয়ক নানা তথ্য ও প্রযুক্তি, মাৎস্য সম্পর্কিত প্রযুক্তি এমনকি পরিবেশ বিষয়ক  নানা রকম লেখার একটি সমৃদ্ধ প্রকাশনার নাম কৃষিকথা। কৃষিকথায় লিখবার জন্য শ্রদ্ধেয় কৃষিবিদ মানজুমুল হক আমাকে উৎসাহিত করেন। লিখতে শুরু করি। লিখতে লিখতে কবে যে শ্রদ্ধেয় মানজুমুল হক স্যার আমার কাছে  মানজুমুল ভাই হয়ে গেছেন এ blending টা নির্ণয় করা কঠিন। লেখকদের তিনি এত ভালোবাসতেন যা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। কৃষিকথার  লেখকরা ছিলেন তার অপার বন্ধু। প্রাণ খোলা হাসি, কাপের পর কাপ চা, লেখার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা, নতুন লেখার আহ্বান এবং সাম্প্রতিক প্রাণিসম্পদের  যে কোনো emerging issue তে তাকে দু-চার পাতা instant লিখে দিয়ে আসা এসবই আমাকে করতে হয়েছে কৃষিকথার পাগল কৃষিবিদ মানজুমুল হক ভায়ের চেম্বারে বসে। শুধু আমাকে নয়, আমার মতো অন্য যারা কৃষিকথায় লিখতেন-তাদেরও ঠিক আমার মতো লিখে দিতে হয়েছে মানজুমুল ভাইয়ের  দাবির কারণে। চাকরির পাশাপাশি লেখালেখির জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্তমান দিকপাল ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম আমার দ্বিতীয় বন্ধু। কৃষি তথ্যের সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে কৃষিবিদ ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম পাগলের মতোই কাজ করেন; মিডিয়াতে কৃষির প্রেজেন্টেশনের ব্যাপারে তিনি নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষ।  তার উদাত্ত আহ্বানে বেতার এবং টেলিভিশনে কৃষিবিষয়ক নানা কার্যক্রমের সঙ্গে আমি আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়েছি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, একজন লেখকের লেখা নিপুণ হাতে সম্পাদনা করে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে সম্পাদকের ভূমিকা অপরিসীম।     


৭৫ বছরের স্বর্ণোজ্জ্বল পথ চলায় কৃষিকথা  কতটুকু প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অবদান রেখেছে সে প্রসঙ্গে অবশ্যই আসতে হয়।  একটি বিষয়ভিত্তিক তথ্যমূলক ম্যাগাজিন সেই বিষয়ের নানা শাখা-প্রশাখাকে কতভাবে তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারে তা কেবল কৃষিকথার পাঠক এবং লেখক সমাজই অনুধাবন করতে পারেন। প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়ার নানাবিধ রোগব্যাধি এসবের পরিচর্যা, স্বাস্থসেবা, রোগ-প্রতিরোধ, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় এদের সংরক্ষণ, খাদ্য ও রোগ দমন, নতুন নতুন রোগ যেমন বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু-ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরে মানুষকে আতঙ্কের হাত থেকে বাঁচানো ইত্যাদি সার্বিক বিষয় কলমের ভাষায় জানাবার জন্য কৃষিকথার সমতুল্য অন্য কোনো পত্রিকা ৭৫ বছর আগেও ছিল না এবং আজও নেই।


তবে কৃষিকথায়  লিখবার জন্য একজন লেখককে সব সময় তথ্যে সমৃদ্ধ থাকতে হয়। যেমন বলা যায়, বার্ড ফ্লু অথবা সোয়াইন ফ্লু এসব emerging pandemic threats এর ক্ষেত্রে পেশাজীবীদের জ্ঞান থাকতে হয় পরিষ্কার এবং updated. মানুষকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে একজন পেশাভিত্তিক লেখকের কাজ। সুতরাং দুনিয়াতে কখন কোন রোগের আবির্ভাব ঘটছে এবং কীভাবে সেটা মোকাবিলা করা হচ্ছে এবং আমাদের কী  করণীয় ইত্যাদি নানা বিষয়েই পেশাভিত্তিক লেখকদের  সর্বদা জানা শোনার মধ্যে থাকতে হয়। শুধু রোগব্যাধি কেন? প্রযুক্তির নানা ডালপালা  কিভাবে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নকে সার্বিক কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখে সে বিষয়েও লেখকের জ্ঞান থাকতে হয় পরিষ্কার এবং updated. যেমন ধরা যাক, একজন কৃষকের জমি আছে, সেখানে ধান, গম, সবজি চাষ করেন। কিন্তু ওই কৃষকের যদি কয়েকটি গরু না থাকে তবে তিনি নানাভাবে বহুমাত্রিক উপকার থেকে বঞ্চিত হন। কারণ কৃষকের জমির পাশাপশি যদি কিছু গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি থাকে তবে সেখান থেকে তিনি বায়োগ্যাস পেতে পারেন, জৈবসার পেতে পারেন। আজকের কৃষিতে জৈবসারের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। দীর্ঘদিনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ মাটিকে অধিক সার নির্ভর করছে এবং মাটির উর্বরতাও নষ্ট করছে। এজন্যই পৃথিবীতে আজ অর্গানিক ফার্মিং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্গানিক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আজ শুধুমাত্র মাটির উর্বরতা রক্ষা করাই সম্ভব হচ্ছে না, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণেও অর্গানিক ফার্মিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষিকথায় তাই প্রাণিসম্পদ, মাৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানকে সমন্বিত করে প্রচার করার মাধ্যমে কৃষকের বহুমাত্রিক সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আজকে খাদ্য বলতে শুধু ভাত আর ডালকে বুঝায় না, আজকে খাদ্য বলতে ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি এবং ফলমূলকে বুঝায়। সুতরাং কৃষিকথায় শুধু প্রাণিসম্পদ অথবা মৎস্য সম্পদ নয়-প্রযুক্তির নানা ডালপালা নিয়ে লিখবার জন্য কৃষিকথা আদিকাল থেকেই সবার আঁধার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা পেশাভিত্তিক লেখার জন্য প্রস্তুত কিনা? যদি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা যায় লিখবার জন্য তবে কৃষিকথা স্থান রেখেছে অবারিত। খুব দুঃখজনকভাবে উল্লেখ করতে হয় প্রাণিসম্পদের মতো একটি বিশাল ক্যাডারে টিপিক্যাল চাকরিজীবী  ছাড়া পেশাভিত্তিক লেখকের বেশ অভাব রয়েছে। এ অভাব যদি ঘোচানো যায় তবেই তথ্যের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।


এখানে প্রশ্ন আসে তথ্যমূলক লেখার মাধ্যমে জনগণ কীভাবে উপকৃত হতে পারে? ধরা যাক,  পোলট্রি পালনে রানীক্ষেত অথবা কলেরা অথবা সালমোনেলা অথবা ই-কোলাই এসব রোগ দমন করতে পারলেই পোলট্রি পালন লাভজনক হয়, নইলে না। এসব রোগের যে কোন একটি প্রসঙ্গে একটি নিবন্ধ রচনা করা সম্ভব হলে মাত্র একটি লেখার মাধ্যমে ৪৫-৫০ হাজার খামারি সেখান থেকে তথ্য পেয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে পারেন।  একজন টিপিক্যাল  পেশাজীবীকে ৫০ হাজার লোকের ঘরে গিয়ে তথ্য সেবা পৌঁছে দিতে ৪-৫ বছর সময় লেগে যাবে। কিন্তু মিডিয়াকে সেবা প্রদানের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করলে মাত্র একটি নিবন্ধই যথেষ্ট।  সুতরাং মিডিয়ার এ শক্তিটাকে যত বেশি কাজে লাগানো যায় ততই গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষকে তথ্য সেবা প্রদান করা যায় এবং এ তথ্য সেবা প্রদানের জন্য কেবলমাত্র একটি কৃষিকথার মতো পত্রিকাই যথেষ্ট এবং এ শ্রেণীর সেবার জন্য ব্যয় অত্যন্ত সীমিত। সুতরাং তথ্য সেবা যত বেশি এবং যত দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় তত বেশি এবং তত দ্রুত  উন্নয়ন ঘটে। এ বিচারে কৃষি তথ্য সার্ভিস স্বয়ংসম্পূর্ণ তথ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। কারণ শুধু কৃষিকথা নয়, ‘ electronic information system (video wing)’ এবং ‘কৃষি রেডিও’ ইত্যাদি সবকিছুই আজ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিজস্ব কর্মকা-ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত। ফলে আজকের কৃষি তথ্য সার্ভিস একটি বহুমাত্রিক তথ্য সেবাদানের স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।


আজকে বিশ্বায়নের যুগের সূচনা ঘটেছে মূলত অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে। তথ্য যখন অধিক দ্রুত এবং অবশ্যম্ভাবিকভাবে পৃথিবীতে বিচরণ করতে শুরু করে তখন কিন্তু পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলো বিচ্ছিন্ন থাকে না। রাষ্ট্রগুলো তখন একীভূত বিশ্বের গ্রামে রূপান্তরিত হয়। সেজন্যই বিশ্বায়নের যুগে রাষ্ট্রগুলোকে বলা হয় global village. সুতরাং তথ্যের বদৌলতে বিশ্বায়ন এবং বিশ্বায়নের মাধ্যমে প্রযুক্তি, বাণিজ্য, উন্নয়ন, বিনিয়োগ, বিনিময়, প্রশাসন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক  ইত্যাদি হাজারো পথ উন্মুক্ত সমগ্র বিশ্বব্যাপী। ‘বিশ্বায়নের যুগে আমাদের প্রাণের কৃষিকথা কৃষকের জন্য কথা বলুক শত শত বছর এ স্বপ্ন দেখি এবং এই প্রত্যাশা করি কৃষিকথার ৭৫ বছরে পদার্পণকালে।’
 

লেখক:

কৃষিবিদ ডা. এম এ সবুর*

* ইউএলও, প্রাণিসম্পদ দপ্তর, মহাদেবপুর, নওগাঁ, মোবাইল :০১৬৮১১২৫৯১২


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon